Friday 2 March 2012

টুকরো কথা-১ ভালই বাস, কি হত্যাই কর!... টুকরো কথা - ২


দ্বিতীয় পর্ব:- 
শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ


ফতেমা একদিন ওই দিগন্ত পার হয়ে বানজারাদের কাফেলার সাথে চলে গেলচলেই গেলতাঁর মতন মানুষের সঙ্গে থাকা অনুচিত ফতেমারখৈয়ামের বেগম আছেফতেমার ঠাঁই কই? তাছাড়া এসব নেশা মাত্রকাল নেশা ছুটে গেলে তখন? ফতেমাকে পরে থাকতে হবে ছেঁড়া কাপড়ের মতনকাবেলার ভাই-বেরাদর যত সকলেই একথা বলেছেফতেমা মেনে নিয়েছেতাঁদের মিলন নেইতাঁদের কুষ্ঠীতে নক্ষত্রের দোষফতেমা কাফেলার সঙ্গে চলে গিয়েছে মরুভূমি পার
তারপরের থেকে নক্ষত্র দেখেছেন তিনিদীর্ঘ্যকাল রাতের আকাশে তাকিয়ে থেকেছেনঘুম আসতো না তাঁরকষ্ট ভারী হয়ে ঝুলতো তাঁর পড়ার ঘরের কোণ-কুলুঙ্গিতেঢুকলেই ঝাঁপিয়ে পড়তো তাঁর উপরে যেন দামাল এক শিশুতিনি তাকে কোলে নিয়ে আদর করতেন, খেলা করতেনকাঁদাতেন, কাঁদতেনএকদিন যখন আর জল ছিল না কোনো তখন ওই অনন্ত আকাশের দিকে চাইলেনযখন তিনি চাইলেন তখন মনে পড়লো তাঁকে ফতেমা বলেছিল,
- আমরা দুজন যেন দুটি সমান্তরাল রেখাচলে যাচ্ছি আর চলে যাচ্ছি
খৈয়াম, যে সুলতান মালিক শাহ-র পরামর্শদাতা, যে কিনা বলখ-এ শেখ মুহাম্মদ মনসৌরির ছাত্র, খোরাসান-এ যাকে শিক্ষা দিয়েছেন স্বয়ং ইমাম মোয়াফফক নিশাপুরি, সে যতই তাঁবু বানানেওয়ালা পরিবারের সন্তান হোক সে আর ফতেমা সমান নাতাঁবু বানানেওয়ালা পরিবারের অনেক অর্থ সঞ্চয় হয়েছিলতাদের দরকার ছিল রাজ বংশের সান্নিধ্যতারা ক্ষমতার কাছে থাকতে চেয়েছিলতাই না আফঘানিস্তান থেকে খোরাসান সর্বত্র নিয়ে গিয়েছে ওমর-কেএই ওমর বানজারা ফতেমার সঙ্গে সব ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে তা কি করে হয়? অনেক পড়াশোনা করে খৈয়াম সার বুঝেছেন যখন ফতেমা এক রাতের আঁধারে চলে গেল মরুভূমির অজানা কোনো প্রান্তে

শিশুকালে যখন শিখেছি অনেক কিছু ইস্কুলে,
যখন পড়াতে এসেছি পরে তখনও কি আনন্দ!
অথচ জানার কথাটি ছিল কাকে শেষ বলে,
শেষটা আসলে ধুলো্‌, আর ডানা হবে নিষ্পন্দ!

রাতের আকাশ দেখেছে খৈয়ামদেখেছে দিন গুণতে গুণতেফতেমা ঠিক কতদিন গেল? কতদিন হল? গুণতে গুণতে তিনি ঠিক করে ফেলেছেন জালালি দিনপঞ্জিকাসূর্যের গমনাগমনের উপর নির্ভর করে ঠিক করেছেনপারস্যের শাহ মেনে নিয়েছেন তাকেএই এখন সমগ্র ইরানীয় অঞ্চলের দিনপঞ্জিকাতিনি কি সূর্য? আদিদেবের মতন? কে জানে? কিন্তু তিনি নিজের কথা জানেনজানেন না ফতেমার কথাফতেমা এখন কোথায়? যাকে তিনি নিবিড় হয়ে ডাকতেম 'মাহ' বলে'মাহ' মানে চাঁদযাকে তিনি রোজ রাতে দেখেনযাকে তিনি কখনো হারান নাযে চাঁদ সুরের লাবণ্য হয়ে ঝরে পড়তো তাঁর বুকে বালির চূড়ায়বালির সমুদ্রে তাঁরা ভাসতেনকখনো কখনো তিনি তার গভীরে ডুব দিয়ে ডেকে উঠতেন,
-'ওহ মাহি'!
'মাহি' তখন মাছ'মাহি' মানে মাছসেই মাছ যে ধারণ করে আছে পৃথিবীকেজন্ম হবে, মৃত্যু হবেচেতনা থাকবেসৃষ্টির গভীরে থাকবে চেতনাযে নানান চেহারা নেবেযেমন তাঁর গবেষণাগারে ধাতুগুলো নেয় তেমন

"Whose secret Presence, through Creation's veins

Running, Quicksilver-like eludes your pains:

Taking all shapes from Mah to Mahi; and

They change and perish all - but He remains;"

---  Rubaiyat of Omar Khayyam, Edward Fitzgerald's translation, stanza 52

যার গূঢ় উপস্থিতি সৃষ্টির শিরায়
দৌড়োয়, রূপোলি সৃষ্টিছাড়া ধাতু
তোমার বেদনাকে অতিক্রম করে যাবে
মাহ থেকে মাহি সব, সমস্ত রূপকেও
সব বদলাবে এমনকি উবে যাবে
যবে, সেদিনও শুধু সে থেকে যাবে

তিনি ধাতুতত্ত্ব জানেনওই রূপোলি মতন ধাতুটি একমাত্র যে সাধারণ তাপমাত্রাতে তরল থাকেযে এখন ঠান্ডা-কঠিন, মুহুর্তে আবার গলে যেতেও পারেকোনো ঠিক নেই তারকিচ্ছু ঠিক নেইপ্রেমের মতন অনিশ্চিত ওই ধাতুতিনি জানেনতাঁর চুল্লীতে কতবার খেলেছেন এই ধাতুর সঙ্গেযেন খেলছিলেন ফতেমার সঙ্গে। (চলবে)