Friday 2 March 2012

পর্বে পর্বে আলেক্ষ্য


পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত- এর দুটি কবিতা এবং সময় কল্পে যাত্রা জুবিনাতীত...
মর্মস্থল


দুঃখ তাপ অভিশাপ উনুনে আগুন,
আমার শ্রীমতী রাখে প্রীতিকর নুন
এ কথা বলেছি আমি কত কবিতায়
নারী যদি ফুল তোলে যদি গান গায়,
তা হলে আষাঢ় হই মেঘ বৃষ্টি জল
ভিজি আর সিক্ত জমি ধারা অবিরল


আমার কত কথা আছে বিচার রাশি রাশি
চিত্তে নিশি চতুর্দশী ভাত জুটছে বাসি
অধিক কিবা বলব আর বিনিঃসৃত কাম,
লীলাবতীর বন্দনাতে অশ্রু ঝরালাম
 
সানন্দার প্রেমিকপর্ব ৪

একান্ত নিজের বলে আমার কিছু নেই আনারস স্ট্রবেরি বা টেনশন...
আমি চা কফি আচারের মতোই তোমার রান্নাঘরে পড়ে থাকবো
আমি জানি মনে মনে এক কাপ বানিয়ে রেখে যাবে তুমি সফেদ
বাদামের সাথে স্বাভাবিকের কাছাকাছি ফিসফিস শুরু
হতেই পারে, তার জন্য ক্যালরি সচেতন, দরকার নেই,
রুটিনমাফিক উত্তুরে হাওয়া তো বইবেই তোমার ফাটাফাটি কম্বিনেশন
আর আমি ফ্লোর-মেকাপে, চিংড়ির খোসা ছাড়িয়ে দেবো আমিই,
কৌতুকময় তাই না , হবে হয় তো সেই সে প্রথম স্ক্রিপ্ট ,
আত্মাকে বসিয়ে রাখলাম তোমার পাশে ,তুমি বললে অ্যাকশন না রোমান্স !
আমি থ্রিডি ভার্সানে এক রাউন্ড ক্রিস্টাল-কফি চাইলাম ,কফি আসলে
হলিউড, ইলেক্ট্রনিক-ওভেন, ভালোবাসার ইউনিক জুয়েলারি

কফির বদলে এলো এক-পর্ব্বত মেকআপ-সেট
ছোট্ট পেনডেন্ট আর টেরাকোটার গয়না
আমাকে বলা হলো আউট...
 
কবিতা দুটির প্রতিলেখা অথবা নিছকই অপকথন...  
মর্মস্থল
মর্মস্থল বিষয় কি বলা যেতে পারে? এ কি সেই জুবিন পর্বের ক্যানভাসার পুণ্যদা? এক বর্গের লেখায় ওঁর সতত অ্যাডভেঞ্চার - প্রেমিক অভিযান... তবে কি মর্মস্থলে শেষোক্ত সম্পূর্তির উৎসব? না মনে হয় - কারণ প্রথম অংশে তিনি বলেন -  

"
এ কথা বলেছি আমি কত কবিতায়
নারী যদি ফুল তোলে যদি গান গায়,
তা হলে আষাঢ় হই মেঘ বৃষ্টি জল..."

এ কি স্থবিরতা? পূর্তির ইঙ্গিত - নাকি মননের সেই অবিদিত স্বপ্ন যাত্রার অনন্য আশ্লেষ! এই পঙক্তিগুলো যেন সেই পরা-বাস্তবায়নের অনাময় সংকেত - বাস্তবে ঘনাক সময়... স্বপ্ন সময়াতীত!

জুবিন যাত্রার উপর্যুপরি আকীর্ণ ও অনিশ্চিত স্বপময়তায় রঙিন পথে ছোট একটি মায়াময় শান্তি বৃক্ষের কান্ডে ঠেস দিয়ে দু দন্ড জিরিয়ে নিচ্ছেন কবি -

"
আমার কত কথা আছে বিচার রাশি রাশি
চিত্তে নিশি চতুর্দশী ভাত জুটছে বাসি
অধিক কিবা বলব আর বিনিঃসৃত কাম,
লীলাবতীর বন্দনাতে অশ্রু ঝরালাম।"

পুরনো অপ্রাপ্তিও আনন্দ-বিষাদ মমতায় মধুময়ী হয়ে উঠেছে তাঁর কাছে - অদূরে অপেক্ষা করছে তাঁর ম্যাজিক রিয়ালিজম্‌ এর অন্তর্গত সীমানাবিহীন জুবিনল্যান্ড...
 
সানন্দার প্রেমিকপর্ব ৪
"একান্ত নিজের বলে আমার কিছু নেই আনারস স্ট্রবেরি বা টেনশন... / আমি চা কফি আচারের মতোই তোমার রান্নাঘরে পড়ে থাকবো ।"
আমি জানিনা কবি পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত কতটা ভেতরে ছেয়ে গেছেন তার এই মানস কথনের ১৪ পদ সম্বলিত লেখায়... এসমস্ত ভাবাবেগ শুদ্ধ মনন ছাড়া প্রতিভাসে আসেনা - অনেক আত্মতুষ্টির - অনুভবের - চেতনের প্রলুব্ধ হাতছানি প্রান্তর পেরিয়ে এই আলম্বে এসে দাঁড়ায় মননসেই সময় কোন অনুভব পাঠকের স্পর্শে এলো আর কোনটা পাশ ছুঁয়ে আধুনিক অহং সমৃদ্ধ শূন্য দশকীয় কবিতা / না-কবিতার 'মায়াবাদ' এর empty narcissism এর পাশ দিয়ে অলক্ষ্যে বেরিয়ে গেলো তা মহান কবির গোচরে আসেনা
"সেই সে প্রথম স্ক্রিপ্ট, আত্মাকে বসিয়ে রাখলাম তোমার পাশে ,তুমি বললে অ্যাকশন না রোমান্স! আমি থ্রিডি ভার্সানে এক রাউন্ড ক্রিস্টাল-কফি চাইলাম ,কফি আসলে / হলিউড, ইলেক্ট্রনিক-ওভেন, ভালোবাসার ইউনিক জুয়েলারি ।"
এমনই এক সর্বং সহা সত্ত্বার উদ্ভাস দেখি তার সানন্দার প্রেমিক পর্বের লেখাগুলিতে... এ কি নিজের প্রতি নিজের উপহাস - প্রকাশ্যে নিজেকে আসবাব করে তোলা? না কি অজানা অহং ত্যাগী সন্ন্যাসবাদ - সেখানে সাধক সুন্দরের উপাসক আর কিছু নয়...
"কফির বদলে এলো এক-পর্ব্বত মেকআপ-সেট
ছোট্ট পেনডেন্ট আর টেরাকোটার গয়না
আমাকে বলা হলো আউট..."
ধন্য এই স্বর্গীয় উদাসীনতা - ভালোবাসার আকর সমৃদ্ধ উৎকর্ষ - কবির ভাষ্য - তার অনাময় শিল্প আর জৈবনিক মায়া মোহতা - magic realism এর সম্রাট সত্যান্বেষীর জীবন রূপকথা!