জুবিন ঘোষ
কবি প্রীতম কুমার রায় আমাকে আজ একটি প্রশ্ন করেছিলেন – “জুবিন দা বিমূর্ত ধারণা বলতে কী বোঝো তোমরা? বাংলায় যা বিমূর্ত কবিতা তাকে কী Abstract Art-এর সাথে তুলনা করা যেতে পারে?” তারই উত্তর দেবার চেষ্টা করলাম ।
দেখো আমি শক্ত কথায় বোঝাতে গেলে এখানেও সেই বিমূর্ততা চলে আসবে । ছোট করে বলবো যাতে সহজে বোঝাতে পারি। বেশি সাহিত্য এক্ষেত্রে বিষয় আরও বিমূর্ত রূপ পাবার আশঙ্কা রাখে...
বিমূর্ত বলতে আমরা বুঝি বিষয় নিরপেক্ষ
ভাবমূলক বা সহজ ভাষায় মূর্তিহীন বা মূর্তি নেই যার। যাকে সহজে নির্দিষ্ট করা যায় না ... খুঁজে নেবার মধ্যেই সে আনন্দ । এক্ষেত্রে বিষয়ের কিছু খণ্ডাংশ
শিল্পী তার শিল্পমাধ্যমের দ্বারা তুলে ধরেন। অস্পষ্ট কিছু ছবি , রূপক , ব্যাঞ্জনা
, ভাব , আঙ্গিক , পরিবেশ, পার্শ্ব বিষয়বস্তু ,
আবহ , উপমা, ছন্দ, রঙ, ঘটনা , আঁচড় - এই
গুলো একক বা সমষ্টিগত ভাবে । শিল্প
গ্রাহককে সেই মাধ্যমটা কে তার বোধ ও চেতনার মধ্যে দিয়ে চালনা করে । ভাবনার দিকগুলো উন্মুক্ত হলে সেই শিল্পরস
আস্বাদন
করবার জন্য প্রয়োজনীয় সুতোগুলোকে মেলাতে থাকে ও বিষয়কে
খুঁজে পেতে চায় ।
ধরো চিত্রকর একটা “হাত” বিশেষ
ভঙ্গিতে এঁকেছেন । কী মানে হয় তার । হাত তো হাত । হাত এর আবার কী মানে হয় ! এবার তার অনেক মানে আছে , ধরো , হাতটার মুদ্রা কী?
হাতটা বাঁধা দিতে চাইছে নাকি মুষ্টিবদ্ধ , কিছু
ধরতে চাইছে নাকি
ছাড়তে চাইছে , কারণ হাতেও বিভিন্ন অভিব্যাক্তি
আছে, হাতটা কি এমন ভাবে আছে
যেভাবে মানুষ সাহায্য চায় , নাকি কাতর, নাকি
কঠিন , নাকি রুগ্ন ,
নাকি ব্যাস্ত, নাকি
ক্লান্ত , নাকি নির্লিপ্ত ,
নাকি লালায়িত , নাকি কাউকে থামাতে চাইছে ,
নাকি ডাকছে কাউকে , নাকি আহত , নাকি
মৃত , নাকি জীবন্ত,
নাকি প্রস্তুতি, নাকি কোনও বিশেষ কাজে যুক্ত ?
এবার দেখো , হাতটা কোন দিকে রয়েছে, ঊর্দ্ধমুখী
নাকি নিম্নমুখী ,
কোনও বিশেষ দিক নির্দিষ্ট করছে কি না
! প্রতিটা দিকের নির্দিষ্ট অর্থ আছে আমরা জানি ।
হাতটার এবার রঙ ও পেনের আঁচড় দেখি । পেশিবহুল কি না, রুগ্ন কি না, কোনও বিশেষ রঙ আছে কি না! লাল হলে একরকম – (হতে পারে সন্ত্রাস বা মৃত্যু ), নীল হলে বিষাদ বা বিষ বা জমাট
বা অসুস্থ বা সাহায্যপ্রার্থী বা হতাশাগ্রস্ত । হলুদ হলে বিষাদ বা পাণ্ডুর , সবুজ হলে সতেজ , প্রাণবন্ত। (চলবে)