Monday 20 February 2012

ভালই বাস, কি হত্যাই কর!... টুকরো কথা-১


শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ

প্রথম পর্ব:-

খুব স্বল্প আলোয় বসেছিলেন তিনিএই সময়টায় চলে আসেন নগরের বাইরে বানজারাদের তাঁবুতে বসে পড়েন এক পেয়ালা শরাব নিয়েমাথার পাগড়িটা বেশ কিছুটা নামানো, কাপড়টা মুখের এপার থেকে ওপারে টানাশুধু পেয়ালায় চুমুক দিতে একটু উঁচু করে নেন মাঝেসাঝেদু-চারজন এমন আদমি আসে এইখানেতারা চায়না তাদের কেউ জানুকঅন্যরাও জানার চেষ্টা করেনাতাছাড়া বানজারার অত কৌতুহলী নয়ওনিশ্চিন্তে বসেছিলেন তিনিখানিক পরেই শুরু হবে নাচ-গান বানজারা পুরুষ ও মেয়েরা নাচবেমরুভূমির বালি উড়বে পায়ে পায়েসামনের যে জায়গাটা খালি সেখানে আগুণ জ্বলে উঠবেতিনি পেয়ালায় চুমুক দিলেনএকটা শিরশিরে হাওয়া আসছে কোথা থেকে যেন! দুটো উট কিছুদূরে নিশ্চিন্তে বসে আছে বেশ কিছুদিন তারা এখানে বসেই থাকবেখাবে আর বসে থাকবেযখন এই বানজারার ডেরা-ডান্ডা গুটিয়ে যাবে তখন আবার ওরা উঠে দাঁড়াবে ভাল করেপিঠে বোঝা নিয়ে দুলতে দুলতে হাঁটতে শুরু করবেমিলিয়ে যাবে দিগন্তেমিলিয়ে যাবেইআহ্‌! আর সহ্য হয়না তাঁরসব মিলিয়ে যাবে? এত, এত কিছু সব? ফতেমার মতন? যার নাভিতে ছিল পদ্মের গঠন তার মতই? তিনি তাঁর যৌবনকে দেখতে পাচ্ছেনযে ওই মরুভূমির বালুর উপরে আধ শোয়াপাশে ফতেমাফতেমার নাভিতে রেখেছেন পেয়ালা কোথাও উঠে যেতে পারবে না সেআর নিজে তিনি কালো আঙুরের ঝাঁক নিয়ে বুলিয়ে দিচ্ছেন ফতেমার ঠোঁটে, চিবুকে, স্তনসন্ধিতে

যদি নেশায় চুর খৈয়াম তবে আনন্দ করো আয়োজন!
যদি রমণীর পাশে ঘোর, তবে আনন্দ করো আয়োজন!
ভাবনা কিসের বল, শেষে তো জানোই বিশ্ব শুধুই শূণ্য,
তার ফাঁকে ভাব তুমি ফাঁকি নও, তুমি তো এখন পূর্ণ!


ফতেমা একদিন ওই দিগন্ত পার হয়ে বানজারাদের কাফেলার সাথে চলে গেলচলেই গেলতাঁর মতন মানুষের সঙ্গে থাকা অনুচিত ফতেমারখৈয়ামের বেগম আছেফতেমার ঠাঁই কই? তাছাড়া এসব নেশা মাত্রকাল নেশা ছুটে গেলে তখন? ফতেমাকে পরে থাকতে হবে ছেঁড়া কাপড়ের মতনকাবেলার ভাই-বেরাদর যত সকলেই একথা বলেছেফতেমা মেনে নিয়েছেতাঁদের মিলন নেইতাঁদের কুষ্ঠীতে নক্ষত্রের দোষফতেমা কাফেলার সঙ্গে চলে গিয়েছে মরুভূমি পার
তারপরের থেকে নক্ষত্র দেখেছেন তিনিদীর্ঘ্যকাল রাতের আকাশে তাকিয়ে থেকেছেনঘুম আসতো না তাঁরকষ্ট ভারী হয়ে ঝুলতো তাঁর পড়ার ঘরের কোণ-কুলুঙ্গিতেঢুকলেই ঝাঁপিয়ে পড়তো তাঁর উপরে যেন দামাল এক শিশুতিনি তাকে কোলে নিয়ে আদর করতেন, খেলা করতেনকাঁদাতেন, কাঁদতেনএকদিন যখন আর জল ছিল না কোনো তখন ওই অনন্ত আকাশের দিকে চাইলেনযখন তিনি চাইলেন তখন মনে পড়লো তাঁকে ফতেমা বলেছিল,
- আমরা দুজন যেন দুটি সমান্তরাল রেখাচলে যাচ্ছি আর চলে যাচ্ছি
খৈয়াম, যে সুলতান মালিক শাহ-র পরামর্শদাতা, যে কিনা বলখ-এ শেখ মুহাম্মদ মনসৌরির ছাত্র, খোরাসান-এ যাকে শিক্ষা দিয়েছেন স্বয়ং ইমাম মোয়াফফক নিশাপুরি, সে যতই তাঁবু বানানেওয়ালা পরিবারের সন্তান হোক সে আর ফতেমা সমান নাতাঁবু বানানেওয়ালা পরিবারের অনেক অর্থ সঞ্চয় হয়েছিলতাদের দরকার ছিল রাজ বংশের সান্নিধ্যতারা ক্ষমতার কাছে থাকতে চেয়েছিলতাই না আফঘানিস্তান থেকে খোরাসান সর্বত্র নিয়ে গিয়েছে ওমর-কেএই ওমর বানজারা ফতেমার সঙ্গে সব ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে তা কি করে হয়? অনেক পড়াশোনা করে খৈয়াম সার বুঝেছেন যখন ফতেমা এক রাতের আঁধারে চলে গেল মরুভূমির অজানা কোনো প্রান্তে (চলবে)